ঘুষ ছাড়া মিলেনা ইকুরিয়া বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স

Passenger Voice    |    ০৫:৫৭ পিএম, ২০২০-১১-০৯


ঘুষ ছাড়া মিলেনা ইকুরিয়া বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স

ইয়াছিন হক : কিছু না লিখেও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ ঢাকা বিভাগের ইকুরিয়া সার্কেলে। এমন প্রমাণ খোদ দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। অনিয়ম, ঘুষ লেনদেন, পরীক্ষা না নিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ বিআরটিএর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবছর ধরে ডজন খানেক অভিযোগ থাকলেও দুর্ণীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স হিসেবে কাজ করছেন সংস্থার চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তবে চেয়ারম্যানের এই চেষ্টায় সহযোগীতা করতে নারাজ বিআরটিএ কতিপয় কর্মকর্তারা। 

মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ সালের সেকশন ২২, ৩১, ৫০ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মোটরযান আইন ১৯৮৪ এর সেকশন ১৭৩(১) সংশোধন করে ১৯৯০ সালের ২৫ এপ্রিল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষমতা বিআরটিএর সহকারী পরিচালককে প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্সে সরকার পরিবর্তন আনলেও সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে পারেনি। 

২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মানসী বিশ্বাস ও উপ-সহকারী পরিচালক শিহাব সালামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম বিআরটিএর ইকুরিয়া সার্কেলে অভিযানে যায়।   

অভিযান চলাকালীন সময়ে কিছু না লিখেও ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অনিয়ম ধরা পড়ে। এক শ্রেণির দালালের সহায়তায় বিআরটিএ ইকুরিয়া সার্কেলে হরহামেশাই হচ্ছে এমন অনিয়ম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানেও এর সত্যতা মিলেছিল।

আরো পড়ুন>>> ইকুরিয়া বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় ভানুমতির খেল

পরিচয় গোপন করে ইকুরিয়া বিআরটিএর এক দালালের সাথে কথা হয় প্যাসেঞ্জার ভয়েসের প্রতিবেদকের। জানা যায় পড়ালেখা না জানলেও, এবং গাড়ি চালাতে না পারলেও পরীক্ষার সময় তারা কর্মকর্তাদের সাথে ৩০০০ টাকায় চুক্তি করে পাস করিয়ে দিয়ে থাকে। তবে পরীক্ষা পাসের ঘুষ লেনদেনের কথা সব সময় অস্বিকার করে বিআরটিএর এইসব কর্মকর্তারা। 

দুদক বলছে তাদের অভিযানে, অভিযান পরিচালনাকারী দল পৌঁছানোর আগেই প্রায় ১০০ জনের পরীক্ষা নেয়া হয়। অবশিষ্ট ১৩০ জনের পরীক্ষা দুদক টিমের সম্মুখে গ্রহণ করা হয়। দুটি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম ব্যাচে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র একজন অনুত্তীর্ণ হন এবং দ্বিতীয় ব্যাচের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫-এর অধিক অনুত্তীর্ণ হন।

দুদকের সহকারী পরিচালক মানসী বিশ্বাস জানায়, অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম পান এবং দুর্নীতির কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন। 

আরো পড়ুন>>>> দেশের ৩৩ শতাংশ গাড়ির ফিটনেস নেই, তবুও সনদ দিয়েছে বিআরটিএ

বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের তথ্য বলছে , শুধু আগষ্ট মাসে বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো সার্কেল-২ এর পেশাদার ৭০৭ ও অপেশাদার ৭৮৯ টি ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া একই কার্যালয়ে ঢাকা জেলা সার্কেল রয়েছে। এই সার্কেলে পেশাদার ২০৬৩ ও অপেশাদার ১০৩০ টি লাইসেন্স ইস্যু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েসের পাওয়া তথ্য বলছে এইসব লাইসেন্সে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে। এই সার্কেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে তিন ক্যাটাগড়িতে ঘুষ আদায় করে থাকে। আগে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে ঘুষ লেনদেন হলেও এখন অনলাইনে যে কেউ লার্নার করতে পারে। তবে দালালরা সেবা প্রার্থীদের ভুল বুঝিয়ে লার্নার করতেও অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরপর ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগে ২০০০ টাকা করে ঘুষ আদায় করে থাকলেও করোনার পরবর্তী সময়ে তা ৩০০০ টাকা করে নিচ্ছে। দালালরা বলছে টাকা ছাড়া পরীক্ষায় পাস অসম্ভব। লাইসেন্সের সেবা প্রার্থীদের সাথে কথা বলে তারও সত্যতা পাওয়া যায়। পরীক্ষায় পাস হলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের আবেদন পত্র গ্রহন করতে আরো দিতে হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এর পর অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স পত্র গ্রহন করতে দিতে হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই সব টাকা গুলো সরাসরি দালাল থেকে বিআরটিএর ক্যাশিয়ার হয়ে চলে যায় কর্মকর্তাদের কাছে।